জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও জাপান যাওয়ার উপায়

স্বাপ্নের দেশ জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে চান? জাপান তার উন্নত টেকনোলজি, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তাই জাপানে কাজ করার স্বপ্ন অনেকের মনেই জাগে। তবে জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া এবং সেখানে যাওয়া সহজ নয়।

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও জাপান যাওয়ার উপায়

যদিও জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে, তবুও সঠিক উপায়  জানা থাকলে জাপানে কাজের ভিসায় যাওয়া আপনার ক্ষেত্রে সহজ হতে পারে। এই পোস্টে আমরা Japan Work Permit Visa for Bangladeshi, জাপানে যেতে কি কি লাগে এবং জাপান যাওয়ার নতুন নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কেন?

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আপনাকে জাপানে একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিতে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই ভিসা সাধারণত বিশেষ দক্ষতা বা জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া হয়। জাপানে কাজ করার মাধ্যমে আপনি যা যা সুবিধা পাবেন - 

  • উন্নত জীবনযাপনঃ জাপান বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ। এখানে আপনি উচ্চমানের জীবনযাপন করতে পারবেন।
  • উচ্চ বেতনঃ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক মজুরি।
  • কর্মজীবনের বিকাশঃ জাপানের কর্মক্ষেত্রে আপনি নিজেকে আরও বিকশিত করার সুযোগ পাবেন।
  • ক্যারিয়ার বৃদ্ধিঃ অনেক শিল্প পদোন্নতি এবং পেশাদার উন্নয়নের জন্য পথ প্রদান করে।
  • নতুন সংস্কৃতি অভিজ্ঞতাঃ জাপানের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আপনাকে অনন্য একটি অভিজ্ঞতা দেবে।

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য যোগ্যতা

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে -

  • জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস থাকতে হয়। তাছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে জাপানী ভাষা N5, N4 লেভেল কম্পিট থাকতে হয়।
  • জাপান ওয়ার্ক ভিসা পেতে অবশ্যই আপনাকে কোন কাজে দক্ষ হতে হবে।
  • আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।
  • আপনার মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
  • আর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জমা দিতে হবে।
  • আপনার কাছে জাপানে কোনো কোম্পানির চাকরির অফার থাকতে হবে।

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল হতে পারে। সাধারণত আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে:

১. জব অফার নিশ্চিত করুন

জাপানি নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একটি বৈধ চাকরির প্রস্তাব নিশ্চিত করা জাপানে কাজের ভিসা পাওয়ার পূর্বশর্ত। জাপানের নিয়োগকর্তারা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য স্পনসর হিসেবে কাজ করেন। তাই অবশ্যই জাপানিজ কোন কোম্পানি থেকে স্পনসরশিপ থাকতে হবে।

২. যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করুন

বেশিরভাগ কাজের ভিসার জন্য নূন্যতম এসএসসি পাশ বা স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়। তাছাড়াও মৌলিক জাপানি ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য। তাই কিছু কিছু কম্পানিতে জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষা (JLPT) পাসের সার্টিফিকেট থাকার প্রয়োজন হতে পারে।

৩. প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করুন

প্রধান নথিগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট।
  • একটি বিস্তারিত জীবনবৃত্তান্ত (CV) এবং কভার লেটার।
  • শিক্ষাগত শংসাপত্র এবং প্রতিলিপি।
  • নিয়োগ চুক্তি বা অফার লেটার।
  • জাপানি ভাষার দক্ষতার প্রশংসাপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)।

৪. যোগ্যতার সার্টিফিকেট (COE)

জাপানি নিয়োগকর্তা কর্মচারীর পক্ষে Certificate of Eligibility (COE) এর জন্য আবেদন করেন। COE জাপানের ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এজেন্সি দ্বারা জারি করা হয় এবং ভিসা আবেদনের প্রাথমিক অনুমোদন হিসেবে কাজ করে।

৫. কাজের ভিসা (ওয়ার্ক পারমিট) আবেদন করুন

COE জারি হওয়ার পর, আবেদনকারীরা বাংলাদেশে জাপানি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে কোন রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আপনি যদি সঠিক কোন রিক্রুটিং এজেন্সি খুজে না পান, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে দ্ধিধা করবেন না। আমাদের ফেইসবুক পেইজে যোগাযোগ করলে আমরা আপাকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবো, ইনলাল্লাহ।

রিক্রুটিং এজেন্সির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ভাষা শিক্ষা
  • ভিসা আবেদনপত্র জমা দেওয়া।
  • COE এবং সহায়ক নথিপত্র প্রদান করা।
  • ভিসা ফি প্রদান করা।

৬. ভিসা অনুমোদন:

যদি আপনার ভিসা আবেদন অনুমোদিত হয় তাহলে আপনি ভিসা পাবেন। ভিসা পাওয়ার পর বিমান টিকেট বুকিং করে জাপানে কাজের ভিসায় যেতে পারবেন।

আরও পড়ুন - ফিজি কাজের বেতন ও ফিজিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি

জাপান যাওয়ার উপায়

ভিসা আসার পর আপনি জাপানে যেতে পারবেন। জাপানে যাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যেমন:

১। বিমানঃ জাপানে যাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ উপায় হল বিমানযোগে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স জাপানের বিভিন্ন শহরে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

২। জাহাজঃ কিছু ক্ষেত্রে জাহাজযোগেও জাপানে যাওয়া সম্ভব।

জাপান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলীর উত্তর নিচে দেওয়া হলো - 

প্রশ্ন ১ঃ জাপানে যেতে কত টাকা লাগে?

উত্তরঃ জাপানে যাওয়ার খরচ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। যেমন: ওয়ার্ক পারমিট, ভিসা, বিমান টিকেট, যাত্রার সময়কাল, যাতায়াত, বাসস্থান, খাবার ও শপিং ইত্যাদি। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জাপান যেতে আনুমানিক ৬ থেকে ৯ লাখ টাকা লাগে। তবে ভ্রমন ভিসায় জাপানে একটি সপ্তাহের জন্য খরচ প্রায় ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা হতে পারে।

প্রশ্ন ২ঃ জাপানে ভিসা প্রসেসিং কত দিন?

উত্তরঃ ভিসার ধরন অনুযায়ী আনুমানিক সময়

  • টুরিস্ট ভিসা ৩-৬ দিন।
  • স্টুডেন্ট ভিসা ৪-৮ সপ্তাহ।
  • ওয়ার্ক ভিসা ৬-১২ সপ্তাহ।

প্রশ্ন ৪ঃ জাপানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য কি কি দরকার হয়? 

উত্তরঃ জাপানি ওয়ার্ক ভিসার জন্য মূল প্রয়োজনীয়তাগুলির মধ্যে রয়েছে একজন জাপানি ডেলিগেট কর্তৃক একটি বৈধ চাকরির প্রস্তাব, যোগ্যতার প্রশংসাপত্র (COE), প্রাসঙ্গিক শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং মৌলিক জাপানি ভাষা দক্ষতা।

প্রশ্ন ৫ঃ জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি?

উত্তরঃ জাপানে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পর্যটন, ম্যানুফ্যাকচারিং, কৃষি ইত্যাদি কাজে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

উপসংহার

জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া এবং সেখানে যাওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। তবে যদি আপনি সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রচেষ্টা করেন তাহলে আপনি এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। আমরা জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয়তা এবং জাপান যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি এই তথ্য আপনার জন্য উপকারী হবে। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে অথবা সঠিক রিক্রুটিং এজেন্সি খুজে না পান, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবো।

Previous Post Next Post