পাইলসকে অর্শ্ব, গেজ বা হেমোরয়েডও বলা হয়। পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়। পাইলস এমন একটি রোগ, যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। এতে মলদ্বারের ভিতরে ও বাইরে এবং মলদ্বারের নিচের অংশে ফোলাভাব দেখা দেয়। এ কারণে মলদ্বারের ভিতরে ও বাইরে বা এক জায়গায় আঁচিল তৈরি হয়। আঁচিল মাঝে মাঝে ভিতরে থাকে, আবার মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসে। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের বয়সের কোনো না কোনো পর্যায়ে পাইলসের সমস্যা থাকে।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় |
রোগীকে সঠিক সময়ে পাইলসের চিকিৎসা করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো পাইলসের চিকিৎসা না করলে ব্যথা অনেক বেড়ে যায়। পাইলস একটি দুরারোগ্য রোগ। অনেকে মনে করেন পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। এজন্য পাইলস হলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও আলাদা চিকিৎসা নিতে হয়। সৃষ্টিকর্তা সকল রোগেরই বাচার উপায় দিয়েছেন।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় রয়েছে। অনেকেই পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যবহার করেও আরোগ্য লাভ করেছেন। আপনার যদি piles theke muktir upay এবং পাইলস সম্পর্কে সচেতন থাকেন তবে দুরারোগ্য রোগ পাইলস থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
পাইলস থেকে মুক্তির উপায় ও চিকিৎসা
অর্শ্ব, পাইলস, গেজ, এনাল ফিসার এসব হচ্ছে মলদ্বারের রোগ। পাইলসের ব্যথা খুব তীব্র এবং বেদনাদায়ক, এতে আপনার মলদ্বারে এবং মলদ্বারের নীচের অংশের চারপাশে শিরা ফুলে যায়। এটি আপনার মলদ্বারে তীব্র ব্যথা এবং মলের সাথে রক্তপাতের সাথে চুলকানির একটি সাধারণ লক্ষণ। যাদের পাইলস আছে তাদের উঠতে ও বসতেও অসুবিধা হয়। পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির জন্য একজন ভালো হোমিও ডাক্তারে সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং তার সাথে পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারেন।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির জন্য আপনাদের সাথে কিছু ঘারোয়া চিকিৎসার কথা বলব এবং পাইলস এর লক্ষণ, পাইলস এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, অপারেশন ছাড়া চিরতরে পাইলস সারানোর উপায় বলব।
পাইলস এর লক্ষণ গুলো কি কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, পাইলসের লক্ষণগুলি গুরুতর নয় এবং নিজে থেকেই সমাধান হয়ে যায়। পাইলস সহ একজন ব্যক্তি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারেন:
- মলদ্বার এবং এর চারপাশে বেদনাদায়ক পিণ্ড।
- মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি এবং অস্বস্তি।
- মল যাওয়ার সময় এবং পরে অস্বস্তি।
- মলের সাথে রক্ত যাওয়া
- মলত্যাগের সময় অত্যাদিক রক্তপাত, সম্ভবত রক্তাল্পতা হতে পারে।
- সংক্রমণ।
- মল অসংযম।
- মলদ্বার ভগন্দর।
- স্ট্র্যাংগুলেটেড হেমোরয়েড, যেখানে পায়ূর পেশীগুলি হেমোরয়েডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়
যাইহোক, পাইলস সহ অনেক লোকের কোনও লক্ষণ নাও থাকতে পারে।
পাইলস রোগের কারন সমূহ
মলদ্বার এবং মলদ্বারের চারপাশের রক্তনালীগুলি চাপে প্রসারিত হবে এবং ফুলে উঠতে পারে বা ফুলে যেতে পারে, যা পাইলস তৈরি করে। এই কারণে হতে পারে:
- দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য
- দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া
- ভারী ওজন উত্তোলন
- মল ত্যাগ করার সময় জুড়ে চাপ দেওয়া।
পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রায়ই মানুষ বুঝতে পারে না যে তারা পাইলস রোগে ভুগছে। মলদ্বারে ব্যথা এবং রক্তপাত খুবই সাধারণ লক্ষণ। এছাড়াও মলদ্বারে চুলকানি এবং মলদ্বার থেকে স্রাব হওয়াও একটি সাধারণ লক্ষণ। তবে আপনার মধ্যে যদি পাইলসের লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারেন। পাইলসের চিকিৎসায় প্রথম কথা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রনে রাখা। আসুন জেনে নেই পাইলসের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার-
১। পানি পান করা বৃদ্ধি করুনঃ
পাইলসের চিকিৎসায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা খুবই জরুরি। এখানে খেয়াল রাখতে হবে পানিতে যেন কোনো প্রকার ভেজাল না করা হয়। শুধুমাত্র সরল পানিই উপকারী। কোমল পানীয়, কফি, চা এবং অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকুন।
২। ইসবগুলের ভুষিঃ
পাইলসের ঘারোয়া চিকিৎসায় ইসবগুল খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে সক্ষ্যম। এতে উপস্থিত অদ্রবণীয় ফাইবার পাইলসের রোগীদের পায়খানা নরম করে দেয়। ফলে পাইলস ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়।
তবে ইসবগুল রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবেন না এবং বেশি পরিমানে খাবেন না। বেশি পরিমানে ইসবগুলের ভুসি খেলে পেট ব্যাথা এবং গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
৩। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান
আপনার খাদ্যতারিকায় ফাইবার জাতীয় খাবার রাখুন। প্রচুর শাক সবজি গ্রহন করুন। ফলের নাম সহ ছবি। আমরা সকলেই জানি, ফাইবার ২ ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়। দ্রবণীয় ফাইবারের মধ্যে ভালো খাবার গুলো হলো - ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, ওটস ও বার্লি মটরশুঁটি, শিম ও বিন জাতীয় খাবার। অদ্রবণীয় ফাইবারের মধ্যে ভালো খাবার গুলো হলো - পূর্ণশস্য বা হোল গ্রেইন খাবার, লাল আটা, বাদাম, খোসা এবং বিচিসহ ফল-সবজি ইত্যাদি।
৪। টয়লেটে সময় ব্যায় কম করুনঃ
পাইলস হওয়াল বড় কারন হলো টয়লেটে সময় ব্যায় বেশি করা। অনেকেই টয়লেটে গেলে আর বের হওয়ার মনে থাকে না। আবার অনেকেই টয়লেটে বসে মোবাইলে গেম বা ভিডিও দেখা শুরু করে। সুতরাং পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় হলো এইসব বদঅভ্যাস ত্যাগ করা।
৫। হলুদ গুঁড়া ও নারকেল তেল
আয়ুর্বেদিক মতে, পাইলসের চিকিৎসায় নারকেল তেল অনেক রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারকেল তেলে এক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে হালকা হাতে বা তুলা দিয়ে পাইলসের ওপর লাগান। এর মাধ্যমে আপনি মলদ্বারের বাইরের অংশে হওয়া পাইলসের উপশম পেতে পারেন।
৬। হলুদ এবং অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা তার শীতল প্রভাবের জন্য পরিচিত। অ্যালোভেরা জেলে হালদির সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পেস্টটি নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে মলদ্বারের পাইলস এলাকায় লাগালে আরাম পাওয়া যায়। অন্তত দুই সপ্তাহ একটানা এই প্রতিকার করুন।
৭। দেশি ঘি ও হলুদ একটি প্রতিষেধক
দেশি ঘি তার গুণের জন্য সুপরিচিত। নিয়মিত দেশি ঘি সেবন করলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দেশি ঘিতে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিয়মিত পাইলসের জায়গায় লাগালে কয়েক দিনের মধ্যেই পাইলসের সমস্যা চলে যাবে।
পাইলস হলে যা করা যাবেঃ
আপনার পায়খানা নরম রাখতে প্রচুর তরল পান করুন এবং প্রচুর ফাইবার খান। স্যাঁতসেঁতে টয়লেট পেপার দিয়ে আপনার মলদ্বার মুছুন। পাইলস ব্যাথা হলে প্যারাসিটামল খান। ৪। চুলকানি এবং ব্যথা কমাতে একটি উষ্ণ গোসল দিন। অস্বস্তি কমাতে একটি তোয়ালে মোড়ানো একটি আইস প্যাক ব্যবহার করুন। আপনার মলদ্বার পরিষ্কার এবং শুকনো রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন (যেমন চা, কফি এবং কোলা) এড়িয়ে চলুন।
পাইলস হলে যা করা যাবে নাঃ
আপনি মলত্যাগ করার পরে আপনার মলদ্বার খুব কঠিন ভাবে মুছবেন না। মলত্যাগের তাগিদ উপেক্ষা করবেন না। মলত্যাগ করতে বসে অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না। ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন না যাতে কোডিন থাকে, কারণ এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। আপনার পাইলস থেকে রক্তপাত হলে আইবুপ্রোফেন গ্রহণ করবেন না। টয়লেটে আপনার দরকারের চেয়ে অতিরিক্ত সময় বসে থাকবেন না।
পাইলস এর চিকিৎসা হাসপাতালে
বাড়িতে চিকিৎসার পরও যদি আপনার পাইলসের কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে আপনার হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা
- রাবার ব্যান্ড লাইগেশন: আপনার পাইলসের চারপাশে একটি ব্যান্ড স্থাপন করা হয় যাতে পাইলস পড়ে যায়।
- স্ক্লেরোথেরাপি: আপনার পাইলসকে সংকুচিত করতে একটি লিকুইড ইনজেকশন দেওয়া হয়।
- ইলেক্ট্রোথেরাপি: আপনার পাইলসকে সংকোচিত করার জন্য একটি মৃদু বৈদ্যুতিক প্রবাহ প্রয়োগ করা হয়।
- ইনফ্রারেড জমাট: একটি ইনফ্রারেড আলো আপনার পাইলসের রক্ত সরবরাহ কমাতে ব্যবহার করা হয় যাতে সেগুলি সংকোচিত হয়।
আপনি এই ধরনের চিকিৎসা নিতে চাইলে একটা কথা জেনে রাখুন, আপনার মলদ্বারে পাইলসের এলাকাটি অসাড় হয়ে যাবে।
যদি এই চিকিৎসাগুলি কাজ না করে তবে আপনার পাইলস অপসারণের জন্য আপনার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
পাইলসের অপারেরশন
- হেমোরয়েডেক্টমি: আপনার পাইলস কেটে ফেলা হয়ে থাকে।
- স্ট্যাপল্ড হেমোরয়েডোপেক্সি: আপনার পাইলস আপনার মলদ্বারের ভিতরে স্ট্যাপল করা হয়।
- হেমোরয়েডাল ধমনী বন্ধন: আপনার পাইলসের রক্ত সরবরাহকে সংকুচিত করার জন্য সেলাই ব্যবহার করা হয়।
পাইলস এর জন্য হোমিও চিকিৎসা
পাইলসের রোগীরা এখন যা বলব তা শুনে অনেক খুশি হবে। কেননা, পাইলস এর হোমিওপ্যাথিক ভালো চিকিৎসা রয়েছে। কথিত আছে, কোষ্টকাঠিন্য নিয়ন্ত্রনে রাখলে এবং ২-৪ মাস হোমিও ঔষধ সেবন করলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।
অনেক হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী পাইলসের রোগীদের সকালে সালফার ও সন্ধ্যায় নাক্স ভূমিকা ঔষধটি দিয়ে থাকেন। মূলত ৩০ শক্তিতে কয়েক মাস খেলে অধিকাংশ পাইলস, গেজ, অর্শ্ব রোগ ভালো হয়ে যায়। অন্য কোন ঔষধের প্রয়োজন হয় না। এই দুটি হোমিও মেডিসিন সরাসরি পাইল নিরাময় করে না। কোষ্টকাঠিন্য নিরাময়ের মাধ্যমে পাইলস নিরাময় করে থাকে।
পাইলস এর হোমিও ঔষধের নামঃ
- এস্কিউলাস হিপ।
- কলিনসোনিয়া ক্যানডেনসিস।
- এলু সকোট্রিনা।
- নাইট্রিক এসিড।
- মিউরিযেটিক এসিড।
- সিপিয়া।
- হেমামেলিস।
- গ্রাফাইটিস।
- নাক্স ভমিকা
- সালফার
- পিওনিয়া
বিঃ দ্রঃ হোমিও হলো লক্ষন ভিত্তিক চিকিৎসা। লক্ষনের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক আপনাকে ঔষধ দিয়ে থাকবে। তাই অবশ্যই রেজিস্টারপ্রাপ্ত একজন ভালো ডাক্তারের কাছে যান। ইনশাআল্লাহ চিরতরে পাইলস থেকে মুক্তি পাবেন।
পাইলস এর মলম হোমিও
পাইলসের জন্য হোমিওপ্যাতিতে অনেক মলম আছে। যেগুলো সাফোজিটরির মাধ্যমে ব্যবহার করলে পাইলসের রক্ত ক্ষরণ, চুলকানি উপশন হয়। আমার দেখা ভালো একটি মলম হচ্ছে - নিউ লাইফ কম্পানির “স্কিউলাস হিপ” নামে একটি অয়েন্টমেন্ট।
আমরা আশা করি, পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় (piles theke muktir upay) পোস্টটি পড়ে পাইলস থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পরেছেন। পাইলস এর চিকিৎসা, লক্ষন, প্রতিকার।