পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি

আসসালামু আলাইকুম, পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি পোস্টে আপনাদের স্বাগতম। patla paikhana hole koronio । আপনি কি জানেন ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? তাহলে আসুন জেনে নিই পাতলা পায়খানা হলে কি খাবার খেতে হবে এবং পাতলা পায়খানার ঔষধ কি।
পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি
পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

পাতলা পায়খানা স্বাভাবিকের চেয়ে নরম হয়ে যায়। এটি জলময়, মশলা বা আকারহীন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এতে খারাপ গন্ধ থাকতে পারে। পাতলা পায়খানার হওয়ার জন্য অনেক সম্ভাব্য কারণ আছে। এগুলি প্রায়শই খাওয়ার পরে ঘটে, তবে ঘন ঘন পাতলা পায়খানাও হতে পারে।

পায়খানা পাতলা হলেই যে আপনার ডায়রিয়া হয়েছে, এমনটি কিন্তু নয়। দিনে ৩ বার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হলে তাকেই সাধারণত ডায়রিয়া বলা হয়ে থাকে। তাছাড়া কারও যদি অস্বাভাবিক ঘনঘন পাতলা পায়খানা হয় তাহলে সেটিও ডায়রিয়া হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

আমরা সকলেই আমাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার সমস্যায় পরেছি। ডায়রিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন, জলযুক্ত মল, পেটে খসখসে হওয়া এবং ফোলাভাব।

পাতালা পায়খানা কেন হয়ঃ

পাতলা পায়খানা বিভিন্ন করনে হতে পারে। যেমনঃ
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রামনের কারনে,যেমনঃ campylobacter এবং Escherichia coli (E. coli), যা প্রায়ই দূষিত খাবার থেকে তোলা হয়।
  • ভাইরাসে সংক্রামন - যেমন নোরোভাইরাস বা রোটাভাইরাস
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার বা দূষিত পানি পান করার কারণে।
  • রাতে ফেলে রাখা বাসি খাবার খেলে।
  • বেশি পরিমাণে তৈলাক্ত জিনিস যেমন সামোসা, পিৎজা, বার্গার ইত্যাদি এবং ময়দা ও বেসন দিয়ে তৈরি জিনিস খাওয়ার কারণে।
  • মানসিক চাপ, শোক বা ভয়ের কারণেও পাতলা পায়খানা হতে পারে।
  • দীর্ঘক্ষণ মল ধরে রাখলে।
  • খুব বেশি দূষিত অ্যালকোহল খাওয়ার কারণে।
  • একই পরিমাণের বেশি পানি পান করলে।
  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মসলাযুক্ত খাবার খেলে।
  • খুব বেশি মিষ্টি খাবার খেলে।
ছোট শিশু বা বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রামক ডায়রিয়া সাধারণ এবং প্রায়ই একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। আপনি যদি দূষিত পানির এলাকায় ভ্রমণ করেন তাহলে পাতলা পায়কানা হতে পারে। ভুলভাবে সংরক্ষিত বা রান্না করা খাবারে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

পাতলা পায়খানার হলে যা যা করণীয়

পাতলা পায়খানা সাধারণত কয়েক দিনের মাঝেই স্বাভাবিকভাবে ভালো হয়ে যায়, তবে এর কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতার দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। পাতলা পায়খানা হলে  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি আপনার ডায়রিয়া হয়ে থাকে তাহলে নিন্মুক্ত ঔষধগুলো সেবন করা যেতে পারেঃ
  • খাবার স্যালাইনঃ যতবার পাতলা পায়খানা হয় ততবার এক প্যাকেট বা আধা লিটার করে খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। যদি ঘরে খাবার স্যালাইন না থাকে তবে ঘরোয়া উপায়ে খাবার স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। তাছাড়াও চিড়ার পানি, ভাতের মাড় বা ডাবের পানিও খেতে পারেন। ভাতের মাড়ে অল্প লবণ দিতে পারেন।
  • জিংক ট্যাবলেটঃ গবেষণায় পরীক্ষিত, জিংক ট্যাবলেট পাতলা পায়খানা হবার সময়কাল এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১০-১৪ দিনের জন্য ২০ মিলিগ্রাম করে জিংক ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ খেতে পারেন।
  • প্যারাসিটামলঃ পেটে অস্বস্তি হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন। বাচ্চাকে ওষুধ দেওয়ার আগে ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা ভালো মত পড়ে নিবেন, আর অবশ্যই বয়স অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে ওষুধ খাওয়াতে হবে।
  • লোপেরামাইড জাতীয় ঔষধঃ পাতলা পায়খানা জরুরী ভিত্তিতে বন্ধ করতে ডাক্তার আপনাকে লোপেরামাইড জাতীয় ঔষধ গ্রহনের পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু লোপেরামাইড জাতীয় ওষুধট কখনই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না। ১২ বছরের কম বয়সী বচ্চাদের এটি ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।

পাতলা পায়খানার ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার কারনে, রোগী তৃষ্ণা অনুভব করতে শুরু করে। এমন অবস্থায় ১ লিটার পানিতে ১ চা চামচ শুকনো ধনেপাতা ফুটিয়ে নিন। অর্ধেক পানি অবশিষ্ট থাকলে পানি ছেঁকে ঠান্ডা করুন। এটি রোগীকে অল্প পরিমাণে দিতে হবে।

১। পাতলা পায়খানা হলে লেবুঃ ১ কাপ বিশুদ্ধ পানিতে ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন সকালে, বিকেলে এবং সন্ধ্যায় খালি পেটে বা খাবারের পরে খান। এটি ধীরে ধীরে অন্ত্র পরিষ্কার করে। এই রেসিপিটি যারা ডায়রিয়ার সাথে পাতলা পায়খানা রোগে ভোগেন তাদের জন্য খুব কার্যকর প্রমাণিত হয়। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো ভালোকরে জেনে তারপর গ্রহন করুন।

২। জিরা দিয়ে পাতলা পায়খানার ঘরোয়া চিকিৎসাঃ আধা চা চামচ ভাজা জিরার গুঁড়ার সাথে ১ কাপ দই বা ঘোল মিশিয়ে নিন। এটি খেলে ডায়রিয়ায় উপকার পাওয়া যায়।

৩। মৌরি বীজ দিয়ে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসাঃ ১ চা চামচ কাঁচা মৌরি ও ১ চা চামচ পাকা মৌরি বা ভাজা মৌরি)নিন। উভয়কে একত্রিত করুন। সকালে ও সন্ধ্যায় আধা চামচ করে রোগীকে দিন। এই প্রতিকারে ডায়রিয়া খুবই উপকারী।

৪। পাতলা পায়খানা হলে বেল খানঃ বেল পেটের জন্য খুবই উপকারী। বেল পাকস্থলীর আলসার, পাইলস থেকে মুক্তি পেতে উপকারী। এটি শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। পাতলা পায়খানা, ডায়রিয়া এবং আমাশয় প্রতিরোধ করে থাকে।

৫। পাতলা পায়খানা হলে পেপে খানঃ কাঁচা পেঁপের ৪-৫ টুকরো সিদ্ধ করে খেলে দীর্ঘস্থায়ী পাতলা পায়খানা রোগ সেরে যায়।


পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি (patla paikhana hole koronio) পোস্টে পাতলা পায়খানা হলে কি খাবার খেতে হবে এবং পাতলা পায়খানার ঔষধ কি সবকিছু বলে দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া প্রায়ই সংক্রমণের কারণে হয়। স্বাস্থ্যবিধি ভালোকরে বজায় রাখলে আপনি পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। টয়লেটে যাওয়ার পরে এবং খাবার খাওয়ার আগে বা খাবার তৈরি করার আগে আপনার হাত সাবান ও গরম পানির মাধ্যমে ভালভাবে ধুয়ে নিন। 
Previous Post Next Post