৭ টি মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় |
মনোযোগ যেকোনো মানুষের ভালো কিছু করার অন্তরায়। যে মানুষ যত সফল সে তত মনোযোগ দিয়ে কাজ করে থাকেন। কেননা আধুনিক বিজ্ঞান বলছে যেকোনো সৃষ্টিশীল কাজের পেছনে মনোযোগ হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কিছু মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় রয়েছে। যেগুলো অবলম্বন করে আপনার মনোযোগ বাড়াতে সক্ষম হবে।
মনোযোগ মানে হচ্ছে মনের সাথে যোগাযোগ। আর মনের সাথে যোগাযোগ করতে পারা বলতে বুজায় মনকে নিজের কথা শুনানো। মন যদি আপনার কথা শুনা শুরু করে তাহলে আপনি দেখবেন যে, সব কাজ আপনি অনেক সচেতন ভাবে করতে পারছেন। যেকোনো কাজে অনেক মনোযোগ দিতে পারছেন। তাই সকল উন্নতির পেছনে মনোযোগ বৃদ্ধি করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের পোস্টে ৭ টি মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় শেয়ার করবো। আপনি যদি মনোযোগ বাড়াতে চান তাহলে এই monojog baranor upay পোস্টটি আপনাকে পড়াশোনা ও সকল ক্ষেত্রে মনোযোগ বড়াতে সাহায্য করবে।
মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় সমূহ
আপনি যদি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারেন তাহলে আপনি অনেক ভালো পড়াশুনা করতে পারবেন। নামাজ পড়াতে অনেক মনোযোগ আনতে পারবেন। কেননা আমরা বেশিরভাগ মানুষেই মনোযোগের সহিত নামাজ আদায় করতে পারি না। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের সাথে মনোযোগ বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকরী কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
১। ধীরতার সাথে শুরু করুন
যেকোনো কাজ যদি তাড়াহুড়া করে শুরু করেন তাহলে সেই কাজে বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কারণ তাড়াহুড়া করা কাজে আপনি খুব বেশি চিন্তা করার সময় পান না। তাই যেহেতু আপনি মনোযোগ বৃদ্ধির কথা ভাবছেন তার মানে আপনাকে একটু বেশি সময় নিয়ে সব কিছু চিন্তা করতে হবে। তাই যেকোনো কাজ ধীরতার সাথে শুরু করুন।
২। প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখুন
বর্তমান যুগ এমন একটা জায়গাতে এসে দাঁড়িয়েছে যে আমরা প্রযুক্তি ছাড়া একমুহূর্ত নিজেকে ভাবতে পারি না। এই ভাবনাটাই আপনার মনোযোগ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। তার কারণ হলো আপনি যদি সবসময় ইন্টারনেটে ডুবে থাকেন, তখন কিন্তু আপনার কোনো চিন্তা শক্তি কাজ করে না। আর চিন্তা শক্তি কাজ না করার মানে হলো আপনি আপনার অত্যাবশকীয় জরুরি কাজটা আর মনোযোগের সহিত করতে পারছেন না। মনোযোগ বৃদ্বির জন্য আজই ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত করুন। তাছাড়া আপনার পক্ষে মনোযোগ বৃদ্ধি করা সম্বব হবে না। নিজে নিজে একটা রুটিন করুন তার পর সেই অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করুন।
৩। নাকের শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন
দিনের যেকোনো একটা সময় আপনি আপনার নিজের নাকের দম খেয়াল করুন। ধরুন আপনি ৫ মিনিট আপনার নাকের দম খেয়াল করবেন, তার জন্য আপনাকে প্রথমে যে কাজটা করতে হবে তা হলো নাক দিয়ে লম্বা করে দম নিন এবং আস্তে আস্তে সেই দম ছাড়ুন। এই প্রক্রিয়াটি অন্তত ১০ বার করুন। এটা আপনাকে স্থীর হতে সাহায্য করবে। আর নিজেকে স্থীর করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ বৃদ্বির জন্য।
৪। ভালো গান শুনুন
একটা কথা প্রচলিত আছে যে, গান হচ্ছে সর্বচ্চো স্তরের একটা কাজ যেটা একজন মানুষের মনের সবচেয়ে কাছে যেতে পারে। তাই মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য আপনি নিয়ম করে দিনের যেকোন একটা সময় আপনি গান শুনতে পারেন। যে গান গুলো আপনার ভালো লাগে।
৫। কাজের মাঝে বিরতি নিন
মনোবিজ্ঞান বলে আমরা যে, আমরা যেকোনো কাজ করবো কিনা সেটা নির্ভর করে আসলে প্রথম ৩ সেকেন্ডের উপর। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা সহজে বুজতে পারবেন। যেমন ধরুন আপনি যখন ইউটুবে কোনো ভিডিও দেখেন সেই ভিডিওটা কি আপনি শেষ পর্যন্ত দেখবেন না তার আগেই সেটা থেকে বেরিয়ে আসবেন এটা আপনার মন ৩ সেকেন্ডেই বুঝে ফেলে। তার মানে বিষয়টা এটা দাঁড়াচ্ছে যে আমরা যে কাজই করি না কেন সেটা খুব বেশি সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে করতে পারি না। এই জন্যই আপনি যদি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে চান তাহলে আপনার প্রয়োজন যে কোনো কাজ করার সময় তার মাঝে একটু বিরতি দেয়া এবং পূনরায় সেই কাজ শুরু করা।
৬। রুটিন তৈরী করুন
মনে রাখবেন জীবনে যে ব্যক্তি যত সফল সে তত নিয়ম মাফিক জীবন পরিচালনা করে। আপনি এই বিষয়টা কখনো কি খেয়াল করে দেখেছেন। দেখবেন সফল মানুষেরা সাথে সবসময় একটা ডাইরি রাখে এবং সেটাতে তাদের দিনের কোন সময়ে কোন কাজ করবে সেটা লেখা থাকে। আপনারও উচিত একটা রুটিন তৈরী করা যেটা দিয়ে আপনি মনের সাথে সংযোগ বাড়াতে পারবেন। আর মনের সংযোগ যত বাড়বে আপনার মনোযোগও তত বৃদ্ধি পাবে।
৭। মনোযোগ বৃদ্ধির খাবার
অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেহেরও বয়স হয়। যাইহোক, ভাল খবর হল যে আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস বুদ্ধিমানের সাথে বেছে নিয়ে আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে পারি। মানুষের মস্তিষ্কের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পুষ্টির প্রয়োজন, যা পুষ্টিকর খাবার থেকে পাওয়া যায়। কিছু কিছু খাবার আছে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
যে খাবারগুলো মনোযোগ বাড়ায়
- বাদাম এবং চকলেটঃ বাদাম এবং পুরো শস্য হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন-ই-এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা বয়স-সম্পর্কিত জ্ঞানীয় পতনের ঝুঁকি কমায়। কাঠ বাদামের উপকারিতা। ডার্ক চকোলেট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং এতে ক্যাফিনের মতো প্রাকৃতিক উদ্দীপক রয়েছে, যা মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
- সকালের নাস্তাঃ প্রায়ই নাস্তা করতে ভুলে যান? সকালের নাস্তা আমাদের মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সকালের নাস্তা আপনার মনোযোগ এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তির জন্য ইতিবাচক। যে শিক্ষার্থীরা সকালের নাস্তা খায় তারা সকালের নাস্তা না খাওয়া শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো পারফর্ম করে। গবেষকদের মতে, যেসব খাবার মস্তিষ্ককে আরও সক্রিয় ও মনোযোগী করে তার মধ্যে রয়েছে উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার যেমন গোটা শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য এবং বিভিন্ন ফল। তবে সকালের নাস্তায় অতিরিক্ত খাবেন না। গবেষকরা আরও বলেছেন যে অতিরিক্ত সকালের নাস্তা খাওয়া আপনার প্রেরণাকে মেরে ফেলতে পারে।
- ক্যাফেইনঃ আপনাকে স্মার্ট করার বা আপনার আইকিউ বাড়ানোর কোন জাদুকরী উপায় নেই। কিন্তু কিছু জিনিস, যেমন ক্যাফিন, আপনাকে আরও অনুপ্রাণিত করে এবং আপনাকে ফোকাস করতে সাহায্য করে। কফি, চকলেট, এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদির মতো উৎস থেকে পাওয়া ক্যাফেইন নিঃসন্দেহে আপনাকে উজ্জীবিত করে তোলে। যাইহোক, অত্যধিক ক্যাফেইন খাওয়ার কিছু খারাপ দিক রয়েছে।
- ব্লুবেরিঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্লুবেরি মস্তিষ্কের অবক্ষয় এবং বয়স-সম্পর্কিত সমস্যা যেমন আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়া, সেইসাথে একাগ্রতা উন্নত করতে সাহায্য করে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রচুর পরিমাণে ব্লুবেরি খেলে মস্তিষ্কের শেখার ক্ষমতা এবং পেশীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- চিনিঃ চিনি মস্তিষ্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস। তবে এটি চায়ে দেওয়া চিনি নয়, এটি বিভিন্ন ফল থেকে পাওয়া চিনি। তাই এক গ্লাস কমলার রস বা অন্যান্য ফলের রস সাময়িকভাবে আমাদের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি এবং মানসিক ক্ষমতা বাড়ায়।
- মাছঃ মাছ আমিষের উৎস এবং মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাবার। মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। প্রচুর মাছ খাওয়া স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ খাওয়া উচিত। দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ দেওয়ার জন্য একটি সুস্থ ও শক্তিশালী মস্তিষ্ক অপরিহার্য।
আরও পড়ুন - ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
অন্যান্য যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
গবেষকরা বলছেন, সারাদিন মনোযোগ ধরে রাখার জন্য একটি ভালো রাতের ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পর্যাপ্ত ঘুম না পান তবে আপনি দিনের বেলা মনোযোগ দিতে পারবেন না। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, কারণ পানির অভাবে ঘনত্ব নষ্ট হয়। ৭ টি মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়, নিয়মিত দৈনিক ব্যায়াম আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য সাহায্য করে।