পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী ও সর্তকতা

পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী ও সর্তকতা পোস্টে আপনাদের স্বাগতম। আপনি কি ই-পাসপোর্ট করবেন ভাবছেন? তাহলে আপনার জন্য এই পোস্ট টি। আজকের পোস্টে পাসপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 
পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী ও সর্তকতা
পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী ও সর্তকতা

দেশের বাইরে পৃথিবীর যেকোন দেশেই ভ্রমণ করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হলো পাসপোর্ট। পাসপোর্ট ব্যাতিত কোন ব্যাক্তি নিজ দেশের বাইরে ভ্রমণ বা কাজের জন্য যেতে পারবে না। তারজন্য দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক প্রত্যেককেই পাসপোর্ট করে নিতে হয়।
  
দেশের প্রতিটি জেলা সদরেই রয়েছে পাসপোর্ট অফিস। এখন ঘরে বসেই পাসপোর্ট (E passport) এর জন্য আবেদন করা যায়। 

আজকের পোস্টে ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে, পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং যারা  ই-পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ছোট কয়েকটা গাইড লাইন শেয়ার করবো। আপনি যদি বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পুড়ন। 

ই পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী ও সর্তকতা

পাসপোর্ট এর জন্য প্রত্যেক বিদেশগামীকে আবেদন করতে হয়। এখন ঘরে বসে ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করা যায়। তাহলে প্রথমেই আলোচনা করা যাক পাসপোর্ট করার আগে যে কথা গুলো মাথায় রাখবেন।

পাসপোর্ট করার আগে যে কথা গুলো মাথায় রাখবেন?

১। ই পাসপোর্ট করতে কখনোই কোন অবস্থাতেই কোন দালালের সরনাপন্ন হবেন না। কেননা এই ডিজিটাল ব্যপারে দালালের কিছুই করার নেই। তাই নিজের পাসপোর্ট নিজে করুন।

২। ই পাসপোর্ট আবেদন আপনারা নিজের টা অবশ্যই নিজে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার পরিবারের কোন সদস্যের জন্য ই পাসপোর্ট আবেদন আপনি নিজেই করতে পারবেন। 

৩। MRP থেকে ই পাসপোর্ট করা আর নতুন ভাবে ই পাসপোর্ট করার ফর্মালিটি একই। এম আর পি (MRP) পাসপোর্ট থাকলে শুধু এর ডাটা গুলো ভুল না করে সঠিক ভাবে নতুন আবেদনে উল্লেখ করুন।

৪। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, ই পাসপোর্ট করতে যে সাপরটিং পেপার লাগে তা অবশ্যই আবেদনের পূর্বেই নিজের কাছে সংগ্রহে করে রাখুন জেনো কোন অবস্থাতেই আপনার আবেদিন টা পরিপূর্ণ করতে কোন রকম ঝামেলায় পড়তে না হয়।

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য যা যা লাগে:
  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • আপনার বাসার বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি
  • আপনার বয়স যদি ১৮  হতে ২০ বছরের মাঝে হয়, তবে NID অথবা ১৭ ডিজিটের ভেরিফাইড Birth Certificate। আর ২০ বছরের উপর হলে অবশ্যই NID লাগবে।
  • পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে তার যে পেইজে ডাটা রয়েছে সেই পাতাটির ফটোকপি করে নিবেন।
  • যারা বিবাহিত তাদের কাবিন নামার কপি প্রযোজন পড়বে।
  • ১৮ বছরের নিচে হলে মা বাবার এর NID এর কপি লাগবে।
  • ৬ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গ্রে বেকগ্রাউন্ডের উপর পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি লাগবে।
  • ১৫ বছরের নিচের বাচ্চাদের জন্য তাদের বাবা মা এর পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
ই পাসপোর্টের জন্য এই সব কাগজের কোন কিছুই সত্যায়িত করার প্রয়োজন নেই। তবে যেদিন Appointment তারিখে আপনারা পাসপোর্ট অফিসে যাবেন সেদিন এই সকল কপির মুল সেট টি অবশ্যই সাথে নিয়ে যাবেন।

ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম ও খরচ

ধাপ-১: প্রথমেই একটি বৈধ ই মেইল আইডি থেকে epassport.gov.bd এই ঠিকানায় গিয়ে নির্দেশনা মোতাবেক আপনার একটা account খুলুন। একাউন্ট খুলতে আপনার একটা সচল বৈধ মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করুন যা সব সময় আপনার নিজের কাছে থাকবে। একাউন্ট খোলার সময় একটা password use করতে হবে । তা অবশ্যই যত্ন সহ সংরক্ষন করবেন। 

ধাপ-২: আপনার একটা একাউন্ট থেকেই আপনি আপনার নিজের ও আপনার পরিবারর সদস্যের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ধাপ-৩: এবার আপনার আবেদন গুলো নির্ভয়ে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে (প্রয়োজন হলে দুই তিন দিন ) পুরন করুন। এটা পুরন করতে গিয়ে প্রতিটা ষ্টেপে "Save and Continue" নির্ভয়ে চাপুন আর পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হন। কেননা এখানে ভুল হলেও আপনি তা শুদ্ধ করার সুযোগ পাবেন। এভাবে একে একে আপনার সব গুলো আবেদন পত্র গুলো পুরন করুন। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন আবেদন পত্র পুরনের শেষ পর্যায়ে "Confirm and Submit" বাটন আসবে। সেই বাটনে ক্লিক করার আগে আপনি এতক্ষন যা পুরন করেছেন তা দাড়ি-কমা সহ ভালোভাবে চেক করে নিন। প্রয়োজন হলে এই ড্রাফটের একটা কপি প্রিন্ট করে নিয়ে ভালো ভাবে এর ইনফরমেশন গুলো যচাই করে নিন। আপনি এই অবস্থায় আপনার কম্পিউটার থেকে বেরিয়ে গেলেও প্রভ্লেম নেই । আপনার এতোক্ষন কাজের সব কিছুই সেইভ হয়ে থাকবে। 

ধাপ-৪: সব কিছু ঠিক থাকলে "Confirm and Submit" বাটনে ক্লিক করুন। ব্যাস আপনার আবেদন এর কাজ শেষ। এই পর্যায়ে আপনার কাছে আপনি কবে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি উঠাবন, আঙ্গুলের ছাপ দিবেন, চোখের আইরিশ ফিতে পারবেন তার Appointment এর শিডিউল চাইবে, তখন আপনি আপনার সুবিধামত Appointment নিন। আর এই Appointment শিট এর একটি কপি প্রিন্ট করে নিন। এবার আপনার আবেদনের ৩ পাতার মুল কপিটি প্রিন্ট করে রাখুন।

নাম লেখার ব্যপারে অনেকেই একটা সমস্যায় ভুগেন যেমন কারো নাম যদি হয় MD. JAHIDUL ISLAM হয় তবে আপনি Given Name এ লিখবেন JAHIDUL ISLAM এবং Sure Name এর জায়গায় লিখবেন ISLAM। কোন Dot অথবা ফোটা ব্যবহার করা যাবেনা। 

আর মনে রাখবেন আপনার শিক্ষা সার্টিফিকেটে আপনার নাম যেভাবেই লিখা থাকুক তাতে কিছুই আসে যায়না। আপনি আপনার আবেদনে নাম লিখবেন আপনার NID অনুযায়ী। 

ধাপ-৫: এবার আপনি নির্দিষ্ট ব্যাংক কে আপনার পাসপোর্ট এর ফী জমা দিন। মনে রাখবেন আপনার আবেদনে যেভাবে নাম লিখেছেন ব্যাংক এর জমার স্লিপ এর নামও  ঠিক হুবুহু একই যেনো হয়। ব্যাংক এ টাকা জমা দেওয়ার পর ব্যাংক আপনাকে  এটা স্লিপ দিবে। যেখানে একটা রেফারেন্স নাম্বার থাকবে। এই রেফারেন্স নাম্বার টা আপনার মুল আবেদনের ৩য় পাতায় নির্ধারিত জায়গায় যত্ন সহকারে নির্ভলভাবে লিখুন। আর ৩য় পাতার নিচে আপনি সাক্ষর ও তারিখ দিন।

এবার পর্যায়ে ক্রমে উপর থেকে নিচের দিকে ব্যাংক জমার স্লিপ, Appointment লেটার, মুল আবেদন পত্র, নিজের NID এর কপি, পুরাতন পাসপোর্ট এর ফটোকপি (যদি থাকে), স্ত্রী এর NID কপি, কাবিন নামার ফটোকপি একসাথে করে একটা সেট বানিয়ে স্টেপ্লার করে সংরক্ষন করুন আর নিশ্চিন্তে Appointment দিনের জন্য অপেক্ষা করুন।

পাসপোর্ট অফিসে দেখা করবেন আগে থেকে নির্ধারণ করা তারিখে সেই প্রিন্ট করা পত্রগুলো ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ নিয়ে। পরে বিভিন্ন ভাবে আবেদন পত্রগুলো ও জাতীয় পরিচয়পত্র চেক করে পত্রগুলোর উপর ছিলমোহর মেরে দিয়ে একটি কক্ষে যেতে বলবে। সেখানে যাওয়ার পর ছবি তুলবে হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের লেন্স নেয়া হবে। পরে পাসপোর্ট  ভেলিভারির একটি স্লিপ দেওয়া হবে। পরে বাড়িতে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। ও ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা হবে। 

পাসপোর্ট ব্যাংক ফি

  • ৪৮ পেজ ৫ বছর মেয়াদে ৪০২৫/- ২১ দিনে
  • ৪৮ পেজ ৫ বছর মেয়াদে ৬৩২৫/- ৭/১০ দিনে জরুরি ডেলিভারিতে 
  • ৪৮ পেজ ৫ বছর মেয়াদে ৮৬২৫/- ২ দিনে।

পাসপোর্ট ফি যেসব ব্যাংকে জমা দিতে পারবেন:

  • ওয়ান ব্যাংক।
    • প্রিমিয়ার ব্যাংক।
    • সোনালী ব্যাংক।
    • ট্রাস্ট ব্যাংক।
    • ব্যাংক এশিয়া।
    • ঢাকা ব্যাংক 

    সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট

    • ৪৮ পেজ ১০ বছর মেয়াদে ৫৭৫০/- ২১ দিনে 
    • ৪৮ পেজ ১০ বছর মেয়াদে ৮০৫০/- ৭/১০ দিনে জরুরি ডেলিভারিতে 
    • ৪৮ পেজ ১০ বছর মেয়াদে ১০৩৫০/- ২ দিনে 

    সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট সংগ্রহ

    পাসপোর্ট ভেলিভারি স্লিপের তারিখ অনুযায়ী আবার পাসপোর্ট অফিসে দেখা করবেন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট চেক করে ই-পাসপোর্ট বুঝিয়ে দেয়া হবে। 

    পাসপোর্টের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় বিষয়:

    1. কোন ভূল ও মিথ্যা তথ্য দিবেন না।
    2. ভূল বা মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করবেন না। 
    3. পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোন সমস্যা হলে দ্রুত পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করবেন
    4. পুলিশ ভেরিফিকেশনে ঘুষ চাইলে পাসপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক জানান
    5. পাসপোর্ট অফিসে কোন সমস্যা হলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনী বা অন্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসীত করেন তারাই বলে দিবে আপনাকে কি করতে হবে কোন কক্ষে যেতে হবে। সুতরাং কারো সাথে অভদ্র আচরণ করবেন না।


    আশা করি, পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী ও সর্তকতা পোস্ট টা পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম । দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করার নিয়ম । ই পাসপোর্ট করার নিয়ম । বাচ্চাদের পাসপোর্ট করার নিয়ম । ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ । 
    Previous Post Next Post